বেগুনের বাম্পার ফলনের পাশাপাশি কৃষকরা লাভজনক হয়েছে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বেগুন বেগুন কাব্য আমার গায়ে দিচ্ছো তুমি আগুন? ঝলসে যাওয়া খোসা ছিলে তেল, নুন, ঝাল লংকা নিয়ে পেঁয়াজ কেটে ঝাঁঝিয়ে দিয়ে অবশেষে চটকে দিলে! আহা! আপনার কি গুণ! বলেন তো দাদা, আমি কি বেগুন? বেগুন নিয়ে কবি সুবীর কাস্মীর এভাবেই কবিতা লিখেছেন।

বিস্ময় আর চমকভরা দৃষ্টি নিয়ে সব মানুষই একবার তাকাতো বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী গফরগাঁওয়ের লাফা বেগুনের দিকে। যারা গফরগাঁও রেল স্টেশন হয়ে ট্রেনে যেতেন, তাদের কাছে অনেক ফেরিওয়ালাই বেগুনের চমক নিয়ে হাঁক ছাড়তো ভাই লাগবনি ভাই লাগবনি গফরগাঁওয়ের লাফা বেগুন। অ-ভাই আইলে নারে/দেখলে নারে/খাইলে নারে গফরগাঁওয়ের লাফা বেগুন।

এখন নানা সমস্যার কারণে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এ লাফা বেগুন। লাফা বেগুন কেবল গফরগাঁও উপজেলার চরআলগী ইউনিয়নের চরমছলন্দ গ্রামের কাচারী পাড়া এলাকায়ই হতো। এলাকার মাত্র ৫০/৬০ জন চাষি এ ফসল ফলাতেন। এ বেগুন বিলুপ্ত হয়ে গেলেও গফরগাঁওয়ের দিগন্ত জুড়ে এখন চাষ হচ্ছে গোল ও লম্বা বেগুন। এবার গোল ও লম্বা বেগুনের ফলনও হয়েছে বাম্পার। এ বেগুন গফরগাঁওয়ের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে সারাদেশে।

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার চরআলগী, দত্তের বাজার, টাঙ্গাব ও পাঁচবাগ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গোল ও লম্বা বেগুন চাষ করে বদলে গেছে ৩ শতাধিক চাষীর ভাগ্যের চাকা।

এখন উপজেলার দিগন্ত জুড়ে বেগুন ক্ষেতের সবুজের সমারোহ। এবার বেগুনের বাম্পার ফলনের পাশাপাশি ভাল দামে অত্যন্ত খুশি চাষীরা। শুধুমাত্র ধান চাষের উপর নির্ভরশীল কৃষি জমিতে বেগুন চাষ এনে দিয়েছে নতুন গতি। কৃষকদের জীবন-জীবিকার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে কৃষির এই সফল বিবর্তন। এই ৪ ইউনিয়নের উৎপাদিত বেগুন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানী হচ্ছে।

উর্বর দো-আঁশ মাটির প্রাচুর্যের কারণে উপজেলার চরআলগী, দত্তের বাজার, টাঙ্গাব ও পাঁচবাগ এই ৪ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ধানের চেয়ে রবিশস্য ও সবজি আবাদ বেশি হয়। বর্তমানে উপজেলার চরআলগী ইউনিয়নের নয়াপাড়া, চরমছলন্দ, জিরাতিপাড়া, কাচারীপাড়া, কুড়–তলীপাড়া, বোরাখালী, নিধিয়ারচর ভাটিপাড়া, চরকামারিয়া, চরমছলন্দ উত্তর নয়াপাড়া ও চরআলগী গ্রামে, টাঙ্গাব ইউনিয়নের ব্রাহ্মনখালী, দুবাশিয়া, বারইহাটি ও টাঙ্গাব গ্রামে, পাঁচবাগ ইউনিয়নের চরশাঁখচূড়া, খুরশিদ মহল, গাভীশিমুল গ্রামে এবং দত্তের বাজার ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাপকভাবে বেগুন উৎপাদিত হচ্ছে।

রাজধানী ঢাকাসহ আশেপাশের উপজেলার বেগুন ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে এতদাঞ্চলের রবি শস্যের অন্যতম গোল ও লম্বা বেগুন।

উপজেলা কৃষি অফিসার এসএস ফারহানা হোসেন জানান, চরআলগী, টাঙ্গাব, ও দত্তের বাজারসহ কয়েকটি ইউনিয়নে এবার বেগুনের বাম্পার ফলন হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১৭০ হেক্টর জমিতে বেগুন আবাদ করে লাভবান হয়েছেন অসংখ্য চাষী।

বিভিন্ন ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চরআলগী, টাঙ্গাব, পাঁচবাগ ইউনিয়নের অন্তত ৩ শতাধিক কৃষক বেগুন চাষ করে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা আয় করছে।

চরআলগী ইউনিয়নের নিধিয়ারচর গ্রামের চাষী মো. সিরু মিয়া জানান, এ বছর তিনি ১ একর জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত তিনি ১ লাখ টাকার বেগুন বিক্রি করেছেন। তিনি অন্তত আরো ১ থেকে দেড় লাখ টাকার অধিক বেগুন বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।

নয়া পাড়া গ্রামের বেগুন চাষী জামাল উদ্দিন এবার ১ একর জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। এ পর্যন্ত তিনি ক্ষেতে বেগুন তুলে বাজারে এনে খুচরা ও পাইকারদের কাছে প্রায় ৯০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেছেন। আরো অন্তত লক্ষাধিক টাকার বেগুন বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি জানান।

নয়াপাড়া গ্রামের হেলাল মিয়া জানান, তিনি এবার ৭০ শতাংশ জমিতে বেগুন আবাদ করেছেন। তার বেগুন প্রায় শেষ হয়ে গেছে। তিনি প্রায় পৌনে ২ লাখ টাকার বেগুন বিক্রি করেছেন।

এছাড়াও ধর্গাবাড়ি গ্রামের হেলাল মিয়া দেড় একর, নিধিয়ারচর গ্রামের বারেক ৪০ শতাংশ, আছমত আলী ৫০ শতাংশ, আব্দুল বারেক ৪০ শতাংশ, বাতেন ৩০ শতাংশ, দুলাল উদ্দিন এক একর, টুমপাড়া গ্রামের আবু সাঈদ দেড় একর, হান্নাছ আলী ১ একরসহ আরো অসংখ্য চাষী বেগুন চাষ করেছেন।

তারা জানান, স্থানীয় কৃষি বিভাগের অনুপ্রেরণায় প্রায় অনাবাদি জমিতে বেগুন চাষ করেছেন তারা। তাদেরকে ছাড়াও টাঙ্গাব, দত্তের বাজার, পাঁচবাগসহ আরো কয়েকটি ইউনিয়নের চাষীরা যুগপৎ এই মৌসুমী ফসল আবাদ করে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর